ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর।

 
ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর।

***ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর।

***অথবা, ভূগোলের পরিধি ও বিষয়বস্তু উল্লেখ কর।


 ভূমিকা :


 ভূগোলের আওতা/পরিধি বা বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করা বেশ কঠিন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে মনীষীদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ করা গেছে। প্রাচীন কাল থেকে বর্তমানে সময় পর্যন্ত পণ্ডিতগণ মানুষ ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে এবং এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে ভূগোলের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ভূগোলের পরিধি বা পরিসর ব্যাপক। তবে অনেকের মতে কোনো অবস্থানের স্থানিক বিশ্লেষণ এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য ভূগোলের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় ।


→ ভূগোলের পরিধি : 


ভূগোল হলো একটি গতিশীল বিজ্ঞান । সময়ের আবর্তে ভূগোলের পরিধি ক্রমবর্তিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবগোষ্ঠীর পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সমীক্ষা করে ভূগোল। সাধারণভাবে ভূগোলের বিষয়বস্তুকে নিম্নলিখিত তিনটি ভাগে ভাগ কার যায়। যথা


১. পৃথিবী;


২. মানুষ ও


৩. পরিবেশ


0️⃣1️⃣ভূপৃষ্ঠ

↙️ ↘️


0️⃣2️⃣মানুষ 0️⃣3️⃣পরিবেশ 



চিত্র ভূগোলের তিনটি মূল উপাদান একটি আরেকটি সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ।


১. পৃথিবী (Earth) : 


ভূগোল হলো একটি স্থানিক বিজ্ঞান। মানুষের সাথে স্থান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পৃথিবীর উৎপত্তি ও বিবর্তন, জলভাগ, স্থলভাগ, সাগর-মহাসাগর, সৌরজগৎ, ছায়াপথ, নীহারিকা, উল্কা ও বায়ুমণ্ডলসহ মহাকাশের যাবতীয় রহস্য নিয়ে ভূগোল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে।


২. মানুষ (Man) : 


ভূগোলের অন্যতম আলোচ্য বিষয় মানুষ। মানবহীন স্থান ভূগোলের আওতায় আসে না। তাই বলা যায়, ভূগোলের সীমারেখা জীবনের সীমারেখা সমান্তরাল। মানুষ ও তার অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, কৃষিকাজ, বসতায়ন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বন্টন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়াদি ভূগোলে সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয় ।


৩. পরিবেশ (Environment) : 


পরিবেশ হলো ঐসব বাহ্যিক নিয়ামক বা উপাদানসমূহের সমন্বয় যা মানুষসহ সকল জীবসত্তার অস্তিত্ব ও কর্মকাণ্ডের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। পরিবেশের বিভিন্নতার জন্য মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ও বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। মরু অঞ্চলের পরিবেশ প্রতিকূল নয় বিদায় সব সময় সাহারা অঞ্চলে প্রায়ই দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। যেমন- সোমালিয়া, ইথিওপিয়া প্রকৃতি। অপরদিকে, মৌসুমি অঞ্চলের পরিবেশ আরামদায়ক বিধায় দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বের সর্বাধিক জনঘনত্ব পরিলক্ষিত হয়। যেমন- বাংলাদেশ পৃথিবীর জনঘনত্বপূর্ণ দেশ।


➡️ভূগোলের বিষয়বস্তু : 


ভূগোলের বিষয়বস্তু বুঝাবার জন্য কয়েকটি মৌলিক ধারণার ব্যবহার করা হয়। ভূগোলের বিষয়বস্তু এমনই যে তা বিজ্ঞান ও কলার মাঝামাঝি অথবা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের মাঝামাঝি অবস্থিত।


 সমাজবিজ্ঞানীদের যুক্তিমতে ভূগোল হচ্ছে সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা। অপরদিকে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এর বৈশিষ্ট্যের আলোকে বলা যায়, ভূগোল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানেরই একটি শাখা। যেহেতু উভয় পক্ষের জোরালো যুক্তি রয়েছে সেহেতু বিতর্কের অবসানকল্পেই ভূগোলকে উভয় বিজ্ঞানের যোগসেতুরূপে একটি বিষয় বলে ধরে নেয়া যায়। হান্টিংটন ভূগোলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, মাটি, পানি ও বায়ুর প্রভাবে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন আসে তা একস্থানের জীবনযাত্রা থেকে অন্যস্থানের জীবনযাত্রার পার্থক্য নির্দেশ করে তারই ব্যাখ্যা 'ও আলোচনা ভূগোলের মূল আলোচ্য বিষয়।


 কাজেই মানুষের জীবনের সঙ্গে ভূগোলের সম্পর্ক অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রকৃতিকে নিয়েই ভূগোলের বিষয়বস্তু। প্রাকৃতিক উপকরণ সংগ্রহের জন্যই মানুষের সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। মানুষের অর্থনৈতিক জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য ভূগোলের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। ভূগোলের লক্ষ হলো ভূপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানুষের সাথে সম্বন্ধযুক্ত সবকিছুই সমীক্ষা করা।



ভূগোলের আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী মানুষ ও পরিবেশ নিয়েই


ভূগোল বিষয়টি গঠিত। সুতরাং এ দুটি উপাদানের আলোচনা


নিঃসন্দেহে ব্যাপক এবং গতিশীলও বটে। প্রতি মুহুর্তে


উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও কার্যাবলি প্রভৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। ভূগোল চর্চা দুটো মূল ধারায় বিভক্ত।


১. প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography) ও


২. মানবীয় ভূগোল (Human Geography)।


১. প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography) :


 সমসাময়িক বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সাথে তাল রেখে প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা যেমন বদলে গেছে, তেমনি ভূগোলের পরিধিও বিস্তৃত হয়েছে বা নতুন করে আঁকা হয়েছে। সেসব ভূগোলবিদ প্রাকৃতিক ভূগোল চর্চা তাঁদের মুখ্য বিষয় প্রাকৃতিক বিষয়াদির। প্রাকৃতিক ভূগোলের বিষয়বস্তুকে ৪টি পরিবেশে ভাগ করা যায়। যেমন,


(ক) অশ্মমণ্ডল (Lithosphere);


(খ) বায়ুমণ্ডল (Atmosphere);


(গ) বারিমণ্ডল (Hydrosphere) ও


(ঘ) জীবমণ্ডল (Biosphere)


(ক) অশ্মমণ্ডল (Lithosphere) : 


ভূপৃষ্ঠের উপরের কঠিন বহিরাবরণকে অশ্মমণ্ডল বলে। অশ্মমণ্ডলের উপরিভাগে জীবজগৎ গড়ে উঠেছে। ভূপৃষ্ঠে থেকে প্রায় ৩০ কি.মি. গভীরতা পর্যন্ত শিলামগুলের ব্যাপ্তি। অশ্মমণ্ডলের উপরের পাতলা আবরণকে ভূত্বক বলা হয়। ভূত্বককে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। যথা ১. মহাদেশীয় ভূত্বক ও ২. মহাসাগরীয় ভূত্বক। পৃথিবীর উৎপত্তি ও বিবর্তন, শিলার উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন, খনিজ পদার্থ, ভূমিরূপের ভাস্কর্য, মৃত্তিকা, ভূমিরূপ এবং ভূমিরূপ গঠনকারী শক্তি ও কারণ ক্ষয়কারী শক্তি এবং এদের নিয়ামক পর্যালোচনা করা হয়।


(খ) বায়ুমণ্ডল (Atmosphere):


 হাজার হাজার কিলোমিটার পুরু যে বায়ুর পৃথিবীর চারপাশে বেষ্টন করে আছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। বায়ুর তাপ, চাপ, প্রবাহ, আলোড়ন, অধঃক্ষেপণ, বিকিরণ, তাপসমতা, বায়ুদূষণ, বায়ুদূষণের কারণ, ফলাফল, গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া, ওজোন স্তরের ক্ষয়, ঘূর্ণিঝড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রতিকার, আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানসমূহের উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব, পৃথিবীর বিভিন্ন | অংশে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ুর উপস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।


(গ) বারিমণ্ডল (Hydrosphere) :


 মহাসাগর, সাগর, উপসাগর, হ্রদের সমন্বয়ে বারিমণ্ডল গঠিত। মহাসাগরগুলোর আকার, আয়তন, গভীরতা, মহীসোপান, মহীঢাল, গভীর সমুদ্রখাত, গভীর সুমদ্রের ঝিনুক অঞ্চল, তটদেশীয় অঞ্চল সমুদ্রের পানির লবণাক্ততার তারতম্য, সমুদ্রস্রোত, সমুদ্রের ও সঞ্চয় পানির উৎস ও বণ্টন, অভ্যন্তরীণ জলবায়ু (পুকুর ও হ্রদ), হ্রদ, জলাভূমি প্রভৃতি বিষয় পর্যালোচনায় করা হয়।


(ঘ) জীবমণ্ডলঃ


 শিলা মন্ডল, বায়ুমন্ডলের নিচের  অংশ এবং সমগ্র বারিমণ্ডল নিয়ে জীবের বসবাসের উপযোগী যে সমন্বিত গড়ে উঠেছে তাকে জীবমণ্ডল বলা হয়। উদ্ভিদ জগৎ ও প্রাণী জগৎ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্ম-মৃত্যু, উদ্ভিদ সম্পদ ও প্রাণিজ সম্পদ নিঃশেষ, বাস্তুতান্ত্রিক উপাদান, জলীয় শক্তিপ্রবাহ, জৈবরসায়ন চক্র, বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, মানুষ এবং পরিবেশিক পদ্ধতিসমূহ, মৃত্তিকা ক্ষয় ও সঞ্চয়, পরিবেশ বিনষ্ট ৩ দূষণ, দুর্যোগ ও বিপর্যয় পরিবেশিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা, বৈশ্বিক পরিবেশিক সমস্যা সম্পর্কে পর্যালোচনায় করা হয়।


২. মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তু (Subject Matter of Human Geography);


 ভূগোলশাস্ত্রের সংজ্ঞা বিষয়বস্তু ঠিক কি তা নিয়ে আজ পর্যন্ত বিতর্কের শেষ নেই। ভূগোলের শাখা প্রশাখাগুলোর মধ্যে যেন এ সমস্যা আরও তীব্রভাবে অনুভব করা যায়। যেমন- মানবীয় ভূগোল যথেষ্ট পুরাতন, ভূগোলের ধ্রুপদী যুগে দ্বিবিভাগের (dichotomy) সৃষ্টি থেকে মানবীয় ভূগোলের অস্তিত্ব গড়ে উঠেছে। ফ্রান্সের সম্ভবনাবাদী (possibilists) ভূগোলবিদগণ মানবীয় ভূগোলকে আরও সুগ্ধতা প্রদান করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীগণের জীবনধারার এই যে পার্থক্য, তার চিন্তাধারার মননশীলতায়, শিক্ষায় ও সংস্কৃতির বিকাশে যে প্রভেদ রয়েছে তার কারণ অনুসন্ধান করাই হলো মানবীয় ভূগোলের মূল উদ্দেশ্য। 


হান্টিংটন (EW. Huntington) এর মতানুসারে, মানবীয় ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের জীবনযাপনের বিভিন্ন অবস্থা বিষয় কেবল জানলেই চলবে না। এ বিভিন্ন জীবনযাপন প্রণালির ঐরূপ ফণ্টন বা বিস্তার কেন হয়েছে তার কারণও অনুসন্ধান করতে হবে। মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে Carlo Sour, P. W. Bryan প্রমুখ ভূগোলবিদগণ ভূপৃষ্ঠে মানুষের উৎপাদনমুখী বা অনুৎপাদনমুখী কর্মের ভৌগোলিক সমীক্ষাই আলোচ্য বলে উল্লেখ করেন।


🔳 নিম্নলিখিত তথ্যগুলো মানবীয় ভূগোল পাঠে প্রধান আলোচ্য বিষয়। 


(i) পৃথিবী পৃষ্ঠে এক একটি অঞ্চলে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী কীভাবে পরিবেশের সাথে নিজেদের অভিযোজন করেছে তার সার্থক আলোচনা পৃথিবীর বুকে মানবজাতির উদ্ভব, ক্রমবির্তন,


শ্রেণিবিন্যাসের বিবরণ মানবীয় উপাদানসমূহ।


(ii) পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীগণের জীবনধারায় যে পার্থক্য এবং চিন্তাধারায় মননশীলতায়, শিক্ষায়, ভাষায়, সংস্কৃতি বিকাশে যে প্রভেন রয়েছে তার কারণ।


(iii) পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল জনসংখ্যার বণ্টন।


 (iv) বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বণ্টনের উপাদান সমূহ। 


(v) ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা পরিবর্তনের মৌলিক ধারণাসমূহ।


(vi) জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও হ্রাসের কারণসমূহ।



মানবীয় ভূগোলের এক অন্যতম অঙ্গ হলো পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক দৃশ্য পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ভূগোলবিদগণ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকৃতির উপর মানুষের কাজকর্মের ছাপ কীরূপ ঘটেছে তা পরীক্ষা করেন। সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যের আবার দুটি দিক আছে। যথা


১. ক্রিয়ামূলক (Functional);


 মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্মের ফলে যে সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্য তৈরি হয়, তাকে ক্রিয়ামূলক বলা হয়। যেমন- শিল্পোৎপাদনের অর্থনৈতিক কাজকর্মের ফলে সৃষ্ট ভূদৃশ্য কৃষিকর্মের ভূদৃশ্য থেকে সম্পূর্ণ পৃথক।


২. নান্দনিক (Aesthetic) : 


সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যের এ বৈচিত্র্যগুলোর দেখা যায় মানুষের পক্ষপাত (prejudice) ও পছন্দের অগ্রাধিকারের জন্য। উত্তর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেইরি, দুইটি গম চাষের অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও জনবসতির ধরন, বাসগৃহের নক্‌শা, কৃষিক্ষেত্রের সীমানা প্রভৃতি বিষয়ে দুটি অঞ্চলের মধ্যে প্রভূত পার্থক্য রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি যেমন পরিবর্তিত হয়, তেমনি সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যও বদলে যায়।


পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনধারার যে পার্থক্য তাদের চিন্তাধারায় মননশীলতায়, শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে তার কারণ অনুসন্ধানই হচ্ছে ভূগোলের মূল বিষয়বস্তু। মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করা হলো :


(ক) সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তুঃ


 সংস্কৃতি হচ্ছে স্থানিক ধরন ও পারিপার্শ্বিক সম্পর্কের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। মানবীয় ভূগালে মানুষ ও প্রকৃতি পরস্পর মিথক্রিয়া ফলাফল নিয়ে অনুসন্ধান করে। এবং পারিসরিক ভিন্নতার কারণ অনুসন্ধান ও ব্যাখ্যা দিতে সচেষ্ট হয়। মানবীয় ভূগোলে সাংস্কৃতিক বিষয়ে চারটি যৌগিক সমন্বয়। | সংস্কৃতির আলোচনায় মানুষ হলো এর কেন্দ্রীয় চরিত্র। কোনো ধরনের নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি আলোচিত হচ্ছে, সেখানে নৃগোষ্ঠীর পরিচয়, বিশ্বাস, আচরণ, চিন্তা, নৃবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয় সংশ্লিষ্ট নৃগোষ্ঠীর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া গঠন, বিদ্যাস, সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক জিজ্ঞাসার আলোকেই জানতে হবে।


(খ) অর্থনীতি ও সম্পদ : মানবীয় ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ■ বিষয় হলো অর্থনীতি ও সম্পদ সমীক্ষা। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরে ভূমি যে প্রভাব বিস্তার করে বা মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকার, ভূমি কর্তৃক যেভাবে প্রভান্বিত হয়ে থাকে তার সমীক্ষা মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তু। মার্কিন ভূগোলবিদ ইমানুয়েল কান্ট সর্বপ্রথম মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে ভূমির প্রভাব ও সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্য বণ্টন, উৎপাদন ও বাণিজ্য বিষয় পঠন-পাঠনকে সমন্বিত করে বাণিজ্যিক ভূগোল নামে একটি শাস্ত্রের উদ্ভব করেন।


(গ) জনসংখ্যা ও জনপদঃ

জনসংখ্যা ও জনপদ জনসংখ্যা ও জনপদ বর্তমানে মানবীয় ভূগোল শাস্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে বিবেচিত। ভৌগোলিক প্রপঞ্চ ও মানবীয় ভূগোলের আলোচ্য বিষয় পরিধির পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যা ও জনপদের আঞ্চলিক বিন্যাসমূলক সুব্যবস্থিত পর্যালোচনা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ এবং শ্রেণিবিন্যাস ইত্যাদি মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তু অন্তর্গত।


(ঘ) অঞ্চল : প্রকৃতি ও মানুষের শত সহস্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এলাকা বা অঞ্চল সৃষ্টি হয় এবং এটি পর্যালোচনাই মানবীয় ভূগোলের আলোচ্য বিষয় হিসেবে প্রাধান্য লাভ করে। ভূগোল শাস্ত্রের ক্রমবিকাশের পটভূমি পর্যালোচনামূলক একাধিক রচনায় মার্কিন ভূগোলবিদ রিচার্ড হার্টশোন 'অঞ্চল' শব্দটি ব্যবহার করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ফরাসি ভূগোলবিদ পর ভিদাল ডি লা রাশ (১৮৪৫-১৯১৮) অঞ্চলের আলোচ্য বিষয় হিসেবে অঞ্চলের ধারণা, অঞ্চল সৃষ্টির বিভিন্ন নিয়ামক অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য, আঞ্চলিক প্রাসঙ্গিকতা, আঞ্চলিক পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন নিয়ামকের প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক পরিবেশ যেমন- (শিল্প অঞ্চল, সম্পদ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, সাংস্কৃতিক অঞ্চল ইত্যাদি) সম্পর্কে পর্যালোচনা বা সমীক্ষা মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তুর অন্তর্গত।


(ঙ) সমাজ : অঞ্চলভেদে মানুষের সামাজিক প্রণালি ও প্রক্রিয়াসমূহ আলোচনা করাই হলো মানবীয় ভূগোলে সমাজ সংক্রান্ত মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। জার্মান পণ্ডিত অটো শুটার প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণবাদ ধারণার বিপরীতে মত ব্যক্ত করেন এবং তিনি সামাজিক কল্যাণ ও সামাজিক সমস্যাসমূহরে পারস্পরিক পার্থক্য এবং সামাজিক সমস্যার মূল কারণ অনুসন্ধান করে মানবীয় ভূগোল শাস্ত্রের উপশাখা হিসেবে কল্যাণমুখী ভূগোল, বাস্তুহারা ভূগোল, লিঙ্গ ভূগোল, চিকিৎসা ভূগোল, চিত্তবিনোদন ও পর্যটন ভূগোল ইত্যাদি উদ্ভব করেন যা মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তু হিসেবে পরিগণিত।


(চ) মানচিত্রাঙ্কন : মানচিত্রের বিশ্লেষণ মানবীয় ভূগোলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। মানচিত্রসমূহ ভৌগোলিক বিশ্লেষণের প্রারম্ভিক পর্যায় হিসেবে গণ্য করা যায়, কারণ মানচিত্রের ভাষা ও তার গুণাগুণ উপলব্ধি ছাড়া ভৌগোলিক অনুসন্ধান সম্পূর্ণ হয় না। মানচিত্রের মাধ্যমে স্থানিক ও কালিক ভিত্তিতে বিষয়সমূহের প্যাটার্ন, পারিসরিক বিন্যাস প্রভৃতি সম্পর্কে অনুসিদ্ধান্ত এবং তার ভিত্তিতে ব্যাখ্যা প্রদান করার নিমিত্তে বিভিন্ন কৌশলাদি ব্যবহার ইত্যাদি মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তুর অন্তর্গত। মানচিত্রের ইতিহাস, ক্রমবিকাশ, মানচিত্রের ভাষা (কী, কেন, কোথায়) মানচিত্র পাঠের পদ্ধতি মানচিত্রাঙ্কন পদ্ধতি এবং বিন্দু, রেখা বা বিষয়বস্তুর অবস্থান বিশ্লেষণ ইত্যাদি সমীক্ষাই মানচিত্র নির্ভর মানবীয় ভূগোলের বিষয়বস্তু ।


উপসংহার : উপরিউক্ত বিষয়বস্তু ছাড়াও মানবীয় ভূগোলে . বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, মানবতাবাদী ঐতিহ্য, ভূগোলে স্থানের সাথে মানুষের সম্পর্ক, মনস্তাত্ত্বিক সংযোগ, পরিবেশগত মনোভাব, ভূদৃশ্য সম্পর্কিত কল্পনা, প্রকৃতির সাথে মানুষের নিয়ত পরিবর্তশীল সম্পর্ক, অর্থনীতির সাথে মানবধর্মী ধারণাসমূহ এবং প্রত্যক্ষবাদী  দ্বারা পরিত্যাক্ত মাঠ জরিপ ইত্যাদি বিষয়গুে মানবীয় ভূগোলে সমীক্ষা করা হয় ।

Post a Comment

0 Comments